۲ آذر ۱۴۰۳ |۲۰ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 22, 2024
হযরত আলী
হযরত আলী ও আহলে বাইত (আ.)

হাওজা / হযরত আলী ও আহলে বাইত (আ.)'কে ভালোবাসা, অনুসরণ ও আনুগত্য করাই হচ্ছে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের (সা.) প্রকৃত দ্বীন ইসলামের যথার্থ ও পরিপূর্ণ অনুসরণ!

সংকলন ও পরিমার্জন: রাসেল আহমেদ রিজভী

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায়শই অভিযোগ করা হয় যে, ‘শিয়ারা হযরত আলী ও আহলে বাইত (আ.)’কে বেশি গুরুত্ব দেয়, ভালোবাসে!’ কেউ কেউ হিংসা ও বিদ্বেষ বশত অপবাদও দেয় যে, ‘শিয়ারা হযরত আলীকে (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)'র চেয়েও বেশি গুরুত্ব ও প্রাধান্য দেয়!’ আরও এমন অনেক অভিযোগ, অপবাদ দিয়ে থাকে যা উল্লেখ করলে লেখার কলেবর সীমা ছাড়াবে, তাই আর উল্লেখ করছি না; বরং শিয়ারা কেন হযরত আলী ও আহলে বাইত (আ.)'কে বেশি গুরুত্ব দেয়, ভালোবাসে- সে আলোচনায় যাওয়া যাক!

শিয়ারা হযরত আলী ও আহলে বাইত (আ.)'কে যে এত বেশি গুরুত্ব দেয়, ভালোবাসে তার কারণ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.) ‘কেবল তাঁদের ভালোবাসা’কে মুমিন মুসলমানদের উপর ওয়াজিব করে দিয়েছেন। মুসলমানদের জন্য আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) পর যাকে অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। কুরআন ও তাঁদের অনুসরণ করাকে মুসলমানদের ঈমান ও নাজাত তথা মুক্তির মানদণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছেন- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইরশাদ করেছেন,

‘‘তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন- কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং যারা ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করেছে আর রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেছে।’’ [সূরা মায়েদা- ৫৫]

শিয়া-সুন্নি সকল তাফসীরকারকদের মতানুসারে রুকুরত অবস্থায় যাকাত আদায়কারী ব্যক্তি হযরত আলী (আ.) অর্থাৎ মুসলমানদের অভিভাবক হচ্ছেন- স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা, তাঁর রাসুল (সা.) এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেছেন,

“(হে নবী) বলুন, আমি আমার রিসালাতের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, কেবল আমার আহলে বাইতের ভালোবাসা ব্যতিত।” [সুরা শুরা, আয়াত নং ২৩]

অর্থাৎ কেউ রিসালাত কবুল করলে তার উপর আহলে বায়েতকে (আ.) ভালোবাসা ফরজ হয়ে হয়ে যাবে। আরো খুলে বললে কেউ নিজেকে মুসলমান ও মুমিন দাবী করার আগে অবশ্যই অবশ্যই আলী ও আহলে বায়েতকে (আ.) নিজের প্রাণাধিক বেশি ভালোবাসতে হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘‘যে সত্ত্বার হাতে আঁমার প্রাণ, সে সত্ত্বার কসম! কোনো ব্যক্তির অন্তরে ঈমান প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না তাঁরা আল্লাহ্ ও রাসুলের খাতিরে তোমাদের (আহলে বাইত) ভালোবাসবে।’’ [তিরমিজি শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদিস নং- ৩৭৫৮, ইস. ফা.]

আহলে বাইত (আ.) কেবল ঈমানের মানদণ্ডই নন, বরং তারা ঈমানদার মুসলমানদের নাজাতের তরী ও কুরআনের সুরা ফাতিহায় উল্লেখিত ‘সিরাতুল মুস্তাকিম' তথা ‘সরল-সঠিক পথ'ও বটে। অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য যে পথ চূড়ান্ত মুক্তি ও সফলতার একমাত্র ও অদ্বিতীয় পথ।

সালাবী তার তাফসীরে কাবীর গ্রন্থে ‘সুরা ফাতিহার তাফসীরে’ হযরত ইবনে বুরাইদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ বলতে ‘মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর ইতরাত, তথা আহলে বাইতের (আ.) পথকে বুঝানো হয়েছে।’’

ওয়াকী ইবনে যাররাহ সুফিয়ান সাওরী সাদী আসবাত ও মুজাহিদ হতে এরা সকলেই ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, আমাদের সরল সঠিক পথে হেদায়েত করো, অর্থাৎ ‘মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের পথ’ বোঝানো হয়েছে।

[ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃষ্ঠা- ১১১; তাফসীরে আলী বিন ইবরাহীম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ২৮; তাফসীরে নূরুস সাকালাইন, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা- ২০-২১; সাওয়ায়েকুল মোহরিকা, পৃষ্ঠা- ১৬ ইত্যাদি]

এছাড়া তিনি নিজের জীবনের অন্তিমকালে বিদায় হজে গাদিরে খুম নামক স্থানে নিজ ঐতিহাসিক বক্তব্যে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে এমন দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ও ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা এই দু'টিকে আকড়ে ধরো; তাহলে আমার পর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। এ দু'টির মধ্যে একটি অপরটি অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ভারী।আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজিদ) এবং আমার রক্তজ বংশধর, আমার আহলে বায়েত- যা আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত বিস্তৃত রশি। আর এ দু'টি হাওজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনোই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। সুতরাং দেখব যে, তোমরা আমার পর এ দু'টির সাথে কিরূপ আচরণ করো।” [তিরমিযী শরীফ, খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ২২০]

অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমাম আলীর (আ.) হাত উঁচু করে তুলে ধরে বললেন, “হে মানব জাতি! নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমার মাওলা আর আমি সমগ্র মুমিনের মাওলা এবং আমি তাদের নিজ জানের থেকেও অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং আমি যার মাওলা এই আলীও (আ.) তার মাওলা!’’ [তিরমিজি-৩৭১৩, ইবনে মাজাহ-১২১]

উপরোল্লেখিত বাক্যটি নবী করীম (সা.) তিন বার, কারো মতে চারবার পুনরাবৃত্তি করলেন। অতঃপর আসমানের দিকে হাত দু'টি তুলে ধরে বললেন,

اللهم والِ من والاه و عادِ من عاداه ، و احب من احبه ، و ابغض من ابغضه ، و انصر من نصره ، و اخذل من خذله ، و أدر الحق معه حيث دار.

‘‘হে আল্লাহ! যে তাঁর সাথে বন্ধুত্ব্ব রাখে, তুমি তার সাথে বন্ধুত্ব রাখো! এবং যে তাঁর সাথে শত্রুতা রাখে, তুমি তার সাথে শত্রুতা রাখো। এবং যে তাঁকে ভালোবাসে, তুমিও তাকে ভালোবাসো। এবং যে তাঁকে হিংসা করে, তুমি তাকে হিংসা করো। এবং যে তাঁকে সাহায্য করে, তুমি তাকে সাহায্য করো এবং যে তাঁকে সাহায্য করা ছেড়ে দেয়, তুমিও তাকে সাহায্য করা ছেড়ে দাও। এবং সে যে দিকে যায়, সত্যকে সেদিকে ঘুরিয়ে দাও।’’

[তাবারানী- আল মু’জামুল কবীর, ৩: ৬৭; হায়সামী- মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯: ১৬৪; ইবনে কাসীর- আল বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া, ৫: ৪৬৩; ইবনে হজর মক্কী: আস সোয়ায়েকুল মুহরিকা: পৃষ্ঠা – ৩৫ (মিশর প্রিন্ট)]

তাছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্য হাদীসে নিজের পর হযরত আলীর (আ.) অবস্থান সুস্পষ্ট করে বলেছেন, ‘‘যে আলী'কে ছেড়ে দিয়েছে, সে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে; আর যে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে, সে আল্লাহকে ছেড়ে দিয়েছে!’’ [ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃষ্টা: ৯৮-৯৯]

অতএব যে কেউ নিজেকে বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও সত্যান্বেষণকারী মুমিন মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন, সে অবশ্যই আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী অনুসরণ, অনুকরণ ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে হযরত আলী ও আহলে বাইত (আ.)'কে শিয়াদের মতই সর্বাধিক গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিবে। কেননা হযরত আলী ও আহলে বাইত (আ.)'কে ভালোবাসা, অনুসরন, অনুকরণ ও আনুগত্য করার মধ্যেই চূড়ান্ত মুক্তি ও সফলতা বিদ্যমান।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের হৃদয়গুলোকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) মহব্বত ও মুয়াদ্দাতে পূর্ণ করুক এবং পরিপূর্ণভাবে তাদের অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুক।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .